পীর হাবিবুর রহমান

তোফায়েল আহমেদ পারেন, তাই ঘুরিয়ে দিলেন। এবার বাজেট নিয়ে গোটা দেশজুড়ে তুমুল বির্তক ও সমালোচনার ঝড়ে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এমনকি সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতারা তো বটেই খোদ মুহিতের ডানে বায়ে বসা সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতারাও তাকে তুলোধুনো করতে ছাড়েননি। জীবনের পড়ন্তবেলায় এমন সমালোচনার বিষের তীরে প্রবীণ মন্ত্রী মুহিত ক্ষত বিক্ষত হলে তার যেসব শুভাকাঙ্খি সংসদের ভিতরে-বাইরে রয়েছেন তারাও তার পক্ষে মুখ খুলতে সাহস পাননি। সেখানে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ সংসদীয় ভাষায় তার নিজস্ব স্টাইলে বিরোধী দল তো বটেই দলের ভিতর থেকে যারা সমালোচনা করেছিলেন, তাদেরকে জবাব দিতে ছাড়েননি।

তোফায়েলের এই ভূমিকায় ঝড়ের কবলে পতিত আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন। মন্ত্রিসভা ও সংসদে তার পাশাপাশি বসা মতিয়া চৌধুরী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে মুহিতকে একহাত নিয়েছিলেন তখনই অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন। যে বাজেট মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সংসদে উপস্থাপন হয়েছে, সেখানে মতিয়া চৌধুরী সংসদে কেন সমালোচনার তীর ছুঁড়লেন? তার যদি আপত্তি থাকতো, তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিরোধিতা করতে পারবেন, নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারতেন।

তোফায়েল আহমেদ তার বক্তৃতায় সুযোগটির হাতছাড়া করেননি। পুরোনো হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে সমালোচকদের জবাব তো দিলেনই সাহসিকতার সঙ্গে বললেন, এই বাজেট অর্থমন্ত্রী উপস্থাপন করেছেন এবং সেটি আমরা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিয়েছি। এই বাজেট প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী তৈরি করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বর্ণাঢ্য জীবন, দক্ষতা, অভিজ্ঞতার চিত্রপট তুলে ধরতেও তিনি ভুলেননি। তিনি সংসদ ও দেশবাসীকে এই আশার বাণীও শুনিয়েছেন যে, প্রস্তাবিত বাজেটে যে বিষয়গুলো নিয়ে বির্তক হচ্ছে; এটি পাস হওয়ার আগেই সেগুলোর সমাধান হতে যাচ্ছে। তিনি সেই ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আসবে বলেই ইঙ্গিত করেন।

মুহিতকে একহাত নেয়ার যে ধারা সংসদে শুরু হয়েছিল, তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পর তা উল্টো পথে হাঁটা দেয়। আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ডিফেন্ড করে সবাই তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসায়ই করেননি, যুক্তিতর্কে বাজেটের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। তোফায়েল আহমেদের পর বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু, মোহাম্মদ নাসিম এমনকি ওয়াকার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের হাসানুল হক ইনুও অভিন্ন কণ্ঠে কথা বলেন।

তারা মুহিতের পাশে দাঁড়ানোতে সংসদের বাইরেও গণমাধ্যমের কাভারেজের কারণে মুহিতের জন্য মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মানুষের এখন অপেক্ষা প্রস্তাবিত বাজেটে কি সংশোধন আনতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়ে যাবে। বলাবলি হচ্ছে, তোফায়েল এক বক্তৃতায় সব কূলই রক্ষা করেছেন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।